
এইবারের জাতীয় ত্রায়োদশ নির্বাচন হতে যাচ্ছে বেশ আকর্ষণীয়। কারণ এই নির্বাচন হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তত্ত্বাবধানে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই অনুপাতে সারাদেশ জুড়ে চলছে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা।
রাস্তা-ঘাটে নির্বাচনী সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিলবোর্ড, চায়ের দোকানগুলোতে পোস্টার, আর সেই পোস্টার দেখে দেখে এককাপ চায়ের সাথে আলোচনা-সমালোচনা চলছে ভোটকে কেন্দ্র করে।
সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামেও চলছে প্রচার-প্রচারণা। কুড়িগ্রাম জেলায় মোট ৪টি আসন। এই ৪টি আসনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জোরেশোরে।২৭কুড়িগ্রাম-০৩ আসনেও চলছে প্রার্থীদের ব্যস্ততা ও প্রচার-প্রচারণা। সেই ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবু সাঈদ (জনী)। তার পোস্টার-বিলবোর্ড ছেঁয়ে গেছে গোটা উলিপুর জুড়ে। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলগুলোতেও দেখা যাচ্ছে তার পোস্টার ও বিলবোর্ড, আর মানুষের সমাগম দেখার মতো।
এই ত্যাগী নেতার ইতিহাসও বেশ ভিন্নধর্মী। জানা যায়, তিনি বিএনপির একজন ত্যাগী নেতা এবং অসময়ের প্রাণপ্রিয় বন্ধুও বটে। ২০১৮ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল থেকে পল্লবী থানা কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার জনী। তাকে সাতদিন রিমান্ডে রাখা হয় এবং দীর্ঘ তিন মাস কারাভোগের পর হাইকোর্ট থেকে দুই মামলায়—বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনে—জামিন পান। জামিন পাওয়ার পরও তিনি থেমে থাকেননি; দলের কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দৃঢ়ভাবে। বিএনপিতে থাকাকালীন সময়ে তিনি নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি, এমনকি নিজের ঘরেও থাকতে পারেননি। তবু হাল ছাড়েননি এই তরুণ নেতা।
তার রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস ঘাটলে বোঝা যায়, ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনে তৎকালীন কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন তিনি—যে সময়টাতে বিএনপির পরিচয় দেওয়া ছিল একপ্রকার ঝুঁকিপূর্ণ অপরাধের মতো। ১৯৯৯-২০০১ সালে তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থানাহাট এ ইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সদস্য। এরপর ২০০২-২০০৬ সালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, টাঙ্গাইল শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭-২০১০ সালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
এরপর জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (জেটেব)-এ যুক্ত হয়ে ২০০৯-২০১২ মেয়াদে সহ-সভাপতি, ২০১৩-২০২২ পর্যন্ত সিনিয়র সহ-সভাপতি, ২০২৩-২০২৪ সালে ১নং যুগ্ম আহবায়ক এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের কমিটিতে সিনিয়র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দলের প্রতি তার নিবেদন, নিষ্ঠা এবং ত্যাগ তাকে দলের ভেতরে এবং বাইরে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে।
রাজনীতির পাশাপাশি সমাজসেবক হিসেবেও ইঞ্জিনিয়ার জনী অর্জন করেছেন আলাদা পরিচিতি। তিনি নিজ অর্থায়নে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান সংস্কার ও উন্নয়ন করেছেন; ভাঙা রাস্তা মেরামত করেছেন। চিকিৎসার অভাবে চিকিৎসা নিতে না পারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, দারিদ্র্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সহায়তা করেছেন, আর বিপদে পড়া পরিবারের পাশে থেকেছেন সবসময়। উলিপুরে তাই অনেকেই তাকে শুধু রাজনীতিক নয়, একজন সমাজসেবক হিসেবেও সম্মান করেন।
উলিপুরের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন একটি নাম—“জনী ভাই”। তাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে তরুণ থেকে বৃদ্ধ সবাই একবাক্যে বলেন, এই মানুষটা অন্যরকম। উলিপুরের চাঁন মিয়া বলেন, এমন তরুণ নেতা থাকলে উলিপুরের উন্নয়ন হবেই। বিএনপির উচিত হবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া। বকুল মিয়া বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এমন করে অন্য কোনো নেতা দাঁড়াননি। তিনি শুধু বিএনপির নেতা নন, তিনি জনমানুষের নেতা। কলেজ ছাত্র আশিক মিয়া বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। অনেকেই তার সহায়তায় পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির উচিত এমন নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া।
অন্যদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সুমিত্রা দেবী বলেন, আমরা সংখ্যালঘুদের ভরসা এই তরুণ নেতা। দুর্গাপূজার সময় অনেক অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
এতোকিছু জানার পর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবু সাঈদ (জনী)-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিকরা অবাক হয়ে যান তার বিনয়ী কথায়। তিনি বলেন, আমার এমপি বা মন্ত্রী হওয়ার কোনো লোভ নেই। সারাজীবন মানুষের সেবা করে যেতে চাই—এই দোয়া করবেন। তিনি আরও বলেন, আমার ইচ্ছা, উলিপুরের যেসব চর এলাকা আছে, প্রথমে সেগুলোর রাস্তা-ঘাট, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষার ব্যবস্থা উন্নয়ন করবো। চর উন্নয়ন হলে উন্নয়ন হবে উলিপুরের। বর্তমানে দারিদ্র্য বেড়েছে, কর্মসংস্থান নেই। তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য যদি সব কিছু বিলিয়ে দিতে হয়, আমি দিতে প্রস্তুত। কর্মসংস্থান বাড়লে দারিদ্র্য কমবে।
তার ভাষায়, আমি বিএনপির মনোনয়ন পেলে কুড়িগ্রাম-০৩ আসনে সর্বোচ্চ ভোটে জয় হবে, কারণ আমার রাজনীতি মানুষকে ঘিরে। শেষে তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী বিএনপি জিন্দাবাদ।
উলিপুরের জনমানুষের মুখে মুখে আজ একটাই কথা—এই তরুণ ত্যাগী নেতার হাত ধরেই বদলে যাবে কুড়িগ্রাম-০৩ আসনের চিত্র। মানুষের সেবাকে যিনি রাজনীতির মূলমন্ত্র হিসেবে নিয়েছেন, তিনি হয়তো একদিন সত্যিই উলিপুরের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করবেন।
মন্তব্য করুন