পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ হলো জুম চাষ। এই পদ্ধতিতে তারা বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি চাষ করে এক বিশেষ ফুল - হলুদ ফুল, যা সবজি হিসেবে স্থানীয়দের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়।
পাহাড়ের উঁচু-নিচু টিলায় জুম চাষের মাধ্যমে হলুদ ফুলের উৎপাদন হয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে গাছপালা কেটে-পুড়িয়ে জমি প্রস্তুত করার পর বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে চাষিরা। একবার বৃষ্টি নামলে শুরু হয় বীজ বপনের কাজ। ধান, আদা, তিল, কচু, পুইশাক, জুমের বেগুন, করলা, টিটা কচু, তুলাসহ অনেক কিলছু একসাথে চাষ করা হয়। এর মধ্যে হলুদ ফুল একটি বিশেষ আকর্ষণ।
খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ব্যাপকভাবে চাষ হয় এই ফুলের। দেখতে সুন্দর এই সাদা ও হলুদ রঙের ফুলটির রয়েছে অতুলনীয় পুষ্টিগুণ ও ওষধি গুণাবলী।
প্রাচীনকাল থেকেই হলুদ ফুল সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি রান্না করে খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, প্রদাহ কমায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি ও কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া হলুদ ফুল লিভারের সমস্যায় কার্যকর, রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং পেশী মজবুত করতেও ভূমিকা রাখে।
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভাষ্যমতে, বিশেষ করে 'সিলং হলুদ' নামে একটি জাতের ফুল মৌসুম শুরুর আগেই ফোটে, তাই এর বাজারমূল্য বেশি থাকে এবং চাহিদাও বেশি। বাজারে বর্তমানে ৫টি হলুদ ফুল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। সিজন শুরু না হওয়ায় দাম তুলনামূলক বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
স্থানীয় দুই চাষি সুদীপ্ত চাকমা ও উজ্জ্বল চাকমা জানান, “হলুদ বা হলুদ ফুল মসলা জাতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। মাছ ও হলুদ ফুল দিয়ে রান্না কিংবা ভর্তা করলে এর স্বাদ অতুলনীয়। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”
সবজি হিসেবে সুস্বাদু, ওষুধ হিসেবে উপকারী এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ—হলুদ ফুল পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের জীবনে এক মূল্যবান উপহার।